10:25 PM প্রশ্ন: ফারাজদাক কে? তার কবিতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। |
প্রশ্ন:
ফারাজদাক কে? তার কবিতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। জাহিদ হাসান এসএম হল ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় chotoderbondhu@gmail.com উত্তর: ভূমিকা:
সাহিত্য মানুষকে আনন্দ দেয়। বিশ্বে প্রায় প্রতিটি ভাষায় সাহিত্য রচিত হচ্ছে। তার
মধ্যে অন্যতম একটি ভাষা এবং সাহিত্য হলো আরবী সাহিত্য। আরবী সাহিত্যের ইতিহাসে
যুগে যুগে যত কবি সাহিত্যিকের আগমন ঘটেছে তাদের মধ্যে অন্যতম একটি নাম ফারাজদাক।
ফারাজদাক আরবী সাহিত্যের আকাশে এখনো জ্বলজ্বল করা এক আলোকবর্তিকা এক ধ্রুবতারা।
নিম্নে প্রশ্নের আলোকে ফারাজদাক সম্পর্কে তুলে ধরা হলো। জন্ম এবং বংশ পরিচয়:
কবি ফারাজদাক
বসরাতে জন্মগ্রহণ করেন। বিভিন্ন সুত্রে বিভিন্ন বর্ণনা আছে কিন্তু কোথাো
ফারাজদাকের সঠিক জন্ম সাল উল্লেখ হয়নি।ধারনা করা হয় ২০ হিজরীর কাছাকাছি সময়ে তার
জন্ম হয়। ফারাযদাক নিজেই বলেছেন > আমি হযরত উসমান (রা:) এর অল্প বয়স্ক ছিলাম,সে
সময়ে আমি স্বগোত্রীয় কবিদের সাথে কুৎসা রটনায় মুকাবেলা করতাম। (যদি কেউ জেনে থাকেন
তাহলে জানাবেন প্লিজ,আসলে আমি জানিনা বলে এই কথা লিখছি। কোন বইয়ে কিন্তু এরকম লেখা
নেই।) তার পুরো নাম আবু ফেরাস হাম্মাম ইবনু গালিব তামীমী। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট
তামীমী কবি। আর এ কারণেই মূলত তার নামের সাথে তামীমী কথাটি জোগ করা হয়েছে। তামীমী
গোত্র জাহলী যুগে জাযীরার পুর্বাঞ্চলে বসবাস করতো। এ গোত্রের শাখা ইয়ামামা থেকে
ফোরাতের উপকূল এবং নজদের অভ্যন্তরীন অংশে বিস্তৃত ছিল। এতে করে বিভিন্ন গোত্রের
মধ্যে মারামারি হানাহানী লেগেই থাকতো। ফারাযদাকের পিতা পিতামহ সবাই উচ্চ বংশীয়
অভিজাত ছিলেন। তার দাদা সাআ সাআ সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে জাহেলী যুগে
তিনি ফিদিয়া দিয়ে শত শত শিশুকে জীবন্ত সমাধস্ত হবার হাত থেকে বাচিয়েছেন। ফারাজদাক
তার এক কবিতায় তার দাদার কথা উল্লেখ করেছেন এভাবে - আমার পিতামহ সাআসাআর দানশীলতা
বৃষ্টির মত বর্ষিত হতো।"অন্য এক স্থানে
তিনি লিখেছেন >যিনি জীবন্ত সমাধী হবার হাত থেকে মেয়েদের রক্ষা করেছেন এবং যিনি
অন্যদেরকে কবর থেকে রক্ষা করেছেন তিনি অঙ্গীকার ভঙ্গকারী হতে পারেন না।< রাসুল সা: এর
সাক্ষাতে ফারাযদাকের দাদা: তামীম গোত্রের
একটি প্রতিনিধি দল একবার রাসুল (সা:) এর সাথে সাক্ষাতে এসেছিল সেই দলে ফারাযদাকের
দাদা সাআসাআ ছিলেন। ফারাযদাকের পিতা নিজে দানশীল ছিলেন। তার দানশীলতা পরীক্ষা করার
জন্য একবার একদল তার কাছে সাহায্য চাইলে তিনি সাথে সাথে একশো উট দান করে
দিয়েছিলেন। ফারাযদাকেনর
স্বভাব চরিত্র: ফারাযদাক ছিলেন
সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। এ কারনে তার মনে আত্মবিশ্বাস এবং গর্ব ছিল অনেক বেশি।
তার কন্ঠ ছিল সে সময় তামীম গোত্রের সবার চেয়ে বেশি গুরুগম্ভীর। তিনি ইসলামে
নিষিদ্ধ মদ পান এবং অন্যান্য গর্হিত কাজে
লিপ্ত ছিলেন। তার জীবন ছিল অনিয়ন্ত্রীত। ফারাযদাকের
জীবন যাপনের ধাচ: ফারাযদাক ছিলেন
একটু ভিন্ন প্রকৃতির কবি। তার জীবন ছিল অনিয়ন্ত্রীত। বিশেষ কারো অধীনে তার
বল্গাহীন জীবন বাধা পড়েনি। দীর্ঘদিন তিনি দামেশকের উমাইয়া দরবার থেকে দূরে অবস্থান
করেন। সম্ভবত তিনি ধারনা করেছিলেন যে তার বংশ মর্যাদা এবং গৌরব উমাইয়াদের চেয়ে কোন
অংশে কম নয়। মদিনায় তিনি স্বচ্ছলেই জীবন অতিবাহীত করছিলেন। তিনি সারাক্ষণ আমোদ
প্রমোদে লিপ্ত থাকতেন। তিনি ক্রিতদাসীদের ঘরে যেতেন নিয়মিত। এ কথা তিনি নিজের
কবিতায় উল্লেখ করেছেন তেমনি ফারাযদাকের চারিত্রিক দুর্বলতার কথা কবি জারির নানা
ভাবে সমালোচনা করতেন। ফারাযদাকের
দাম্পত্য জীবন: রুক্ষ এবং কঠোর
স্বভাবের কারণে ফারাযদাকের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিলনা। তার স্ত্রী নায়োরের সাথে
বিচ্ছেদের ঘটনাই তার অসুখী হবার প্রমান মেলে। কুরায়েশ বংশের এক লোক নায়ারকে বিয়ের
প্রস্তাব দিয়েছিল। নায়ার ফারাযদাককে নিজের অভিভাবক নিয়োগ করে। ফারাযদাকের জীবন
সঙ্গীনী হিসেবে নায়ার কখনোই সুখী ছিলনা। তাদের মধ্যে অশান্তি ,কলহ,দন্দ লেগেই
থাকতো। ফারাযদাকের
ধর্ম বিশ্বাস: আরবী সাহিত্যের
এই ক্ষণজন্মা কবি বাস্তব জীবনে কোন ধর্মই অনুসরণ করতেন না। পক্ষান্তরে তার স্ত্রী
ছিলেন একজন পুণ্যশীলা ধার্মীক নারী। উভয়ে বনিবনা না হবার কারনে দুজনের ছাড়াছাড়ি
হয়ে যায়। ফারাযদাক এই তালাকের পর তাই লিখেছিলেন >নায়ারকে
তালাক দিয়ে আমি কুসাআর মত লজ্জিত ,যে ভুল বুঝে নিজের ধনুক ভেঙ্গেছিল।সে ছিল
বেহস্তের মত,সেই বেহেস্ত থেকে আমি বেরিয়ে এসেছি যেমন পাপ হযরত আদম আ: কে বহিস্কার
করেছিল।< ফরাযদাকের
সন্তান সন্ততি: ইবনু কুতাইবার
বর্ণনা অনুযায়ী ফারাজদাকের জামাআ নামে একটা পুত্র সন্তান ছিল। এ ছাড়া তার কন্যাদের
মধ্যে যাদের নাম উল্লেখ করা যায় তারা হলেন লাবাতা,সাবাতা,খাবাতা এবং রাককাতা। তার
একমাত্র ছেলেটি ছিল কবি। ফারাযদাকের
কবিতার বৈশিষ্ট্য: ফারাযদাকের
কাব্য ভাষা ছিল অত্যন্ত তীক্ষ্ন। বিবাদ বিতর্কের প্রতি তার আগ্রহ ছিল বেশি। এ
কারনে নিজের গোত্র এবং অন্য গোত্রের লোকদের সাথে প্রায়ই তিনি কলহে লিপ্ত হতেন।
বানু ফাকীম গোত্র একবার কোন এক গোত্রের নিকট থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বের
হয়। কিন্তু ক্ষতি পুরণের নিমিত্তে তারা ফিরে যায়। ফারাযদাক এটার তীব্র নিন্দা
জানান। তিনি কবিতায় লিখেছেন > বানু ফাকীম গোত্র সব গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে
বেদনাদায়ক জিনিষ নিয়ে এসেছে”< কবি
হুতায়া ফারাযদাকের কবিতা শুনে বলেছিলেন এগুলোকেই বলে কবিতা। এতদিন যা শুনেছি তা
কবিতা নয়। আমাদেরকে কেবল কবিতার নাম করে শান্তনা দেয়া হয়েছিল। তার কবিতায় বিভিন্ন বিষয়ে তার বিদ্বেরে পরিচয়
মিলেছে যেমন তিনি সুলাইমান ইবনু আবদুল মালিক ক্ষমতায় আসার পর তাকে নিয়ে লিখেছেন > আমি বানু হারবকে পরিত্যাগ করেছি
যারা ইমাম ছিলেন এবং আমি আপনার পিতামহ মারোয়ানকে পরিত্যাগ করেছি। অথচ সে সময় অলীদ
আমাকেই আমারই ভালোর জন্য ডেকেছিলেন। আপনার খিলাফত গ্রহণের আগে আমি খুশি মনে কখনো
সিরিয়ায় আসিনি।< সেই সময়ে
ফারাযদাক বনু উমাইয়াদের কবি হিসেবে মনোনীত হন। অন্য কবিদের মত তিনি নিজেো খলিফাদের
গুনগান গেয়ে কবিতা লিখেছেন। যেমন তিনি সুলাইমান সম্পর্কে লিখেছিলেন>তাোরাত এবং
যবুর আপনার গুন বৈশিষ্ট্যই আমাদের কাছে বর্ণনা করেছে। ইহুদী নাসারাদের পন্ডিতগণ
আমাদেরকে মাহাদীর খিলাফাত সম্পর্কে খবর দিচ্ছিলেন। আল্লাহ তায়ালার প্রসংশাভাযনের
খিলাফাতকে আমাদের জন্য মুক্তি এবং নিরাপত্তার মাধ্যম করে দিয়েছেন। বর্ণিত আছে যে
ফারাযদান জীবনের শেষ দিকে ভালো হয়ে গিয়েছিলেন এবং ধর্ম বিশ্বাসে বিশ্বাসী
হয়েছিলেন। ভাষা এবং ব্যাকরণবিদগণ ফারাযদাকের কাব্য থেকে অভিধানের কিছু উপকরণ
সংগ্রহ করেছেন। কথিত আছে যে ফারাযদাকের কাব্য সম্ভার না থাকলে আরবী ভাষার এক
তৃতীয়াংশ নি:শেষ হয়ে যেত। এ কারণে ব্যাকরণ এবং ভাষা বিজ্ঞানের গ্রন্থাবলিতে তার
কবিতা থেকেই বেশি উদ্ধৃতি ব্যবহৃত হয়েছে।ইতিহাস গ্রন্থাবলিতে তার কবিতার উল্লেখ
করা হয়ে থাকে। আরব গোত্র সমুহ তাদের যুদ্ধ,তাদের দোষগুণ ইত্যাদি তার কাব্যের বহুল
আলোচিত বিষয়। ঐতিহাসিকরা ফারাযদাকের অবদান শ্রদ্ধাভারে স্মরণ করে। ফারাযদাকের
জীবনাবসান: ১১৪ হিজরীতে
ফারাযদাক মৃত্যু মুখে পতিত হন। জুরযী জায়দান তার মৃত্যু সাল ১১০ হিজরী বলে উল্লেখ
করেছেন। কিন্তু তিনি ১১৪হিজরীতেই মারা গেছেন। উপসংহার: বলা হয়েছে
ফারাযদাক সারাজীবন কুৎসামূলক কবিতা রচনা করেছেন এবং অপকর্ম করে জীবন কাটিয়েছেন।
কিন্তু প্রশংসামুলক কিবতা রচনায় তিনি আখতাল এবং জারিরের চেয়ে তিনি খুব একটা বেশি
অবদান রাখতে পারেননি। ফারাযদাকের ব্যক্তিগত জীবনে কলুষ কালিমা ছিল ঠিকই কিন্তু তার
কবিতায় ইসলামের সুস্পষ্ট ছাপ বিদ্যমান। নামায,তাকোয়া,আম্বিয়ায়ে কেরাম,পরকাল,হিসাব
নিকাশ ইত্যাদি ছিল তার কবিতার বিষয়বস্তু। বর্তমানে ফারাযদাকের কাব্যের পুরোনো নতুন
অনেক সংস্করণ বিদ্যমান রয়েছে। |
|
Total comments: 1 | ||
| ||